শাশুড়ির নাকে কামড় বসালেন ছেলের বৌ !

বৌমা

শাশুড়ি-বৌমার মধ্যে চুলোচুলির লাখো গল্প ছড়িয়ে আছে। কিন্তু রবিবার পশ্চিমবঙ্গের বালুরঘাট থানার পণ্ডিতপুর দেখল এক আশ্চর্য ঘটনা। অভিযোগ, ঝগড়ার ঝালায় পৌঁছে শাশুড়ির নাকে জব্বর কামড় বসালেন বৌমা। নাক কাটা অবস্থায় শেষে শাশুড়িকে ভর্তি করানো হল হাসপাতালে।

স্থানীয়দের কথায়, ঘটনার পরেই এলাকা থেকে পালিয়েছিলেন ছেলে-বৌমা। পরে তাঁরাও হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যান। তাঁদের পাল্টা অভিযোগ, নাকের কথা জানেন না, কারণ মার খেয়ে তো তাঁরা অজ্ঞানই হয়ে গিয়েছিলেন!

পুলিশ কিন্তু বলছে অন্য কথা। বালুরঘাট থানার আইসি সঞ্জয় ঘোষ বলেন, মৌখিক ভাবে নালিশ পেয়েছেন তাঁরা। লিখিত অভিযোগ পেলে ছেলে-বউয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাসপাতালে ভর্তি ৫৫ বছরের সুমিত্রা লাহা জানিয়েছেন, সুস্থ হলেই বৌমার বিরুদ্ধে পুলিশে যাবেন।

সুমিত্রাদেবীর বড় ছেলে গৌর এবং ছোট ছেলে গোপীনাথ। স্বামী মারা যাওয়ার পরে নিজের সামান্য কিছু গয়না বেচে সুমিত্রাদেবী কিছু জমি কেনেন। সেই জমির অর্ধেক ফসল দেওয়ার শর্তে ছোট ছেলেকে
চাষের দায়িত্ব দেন তিনি। রবিবার সুমিত্রাদেবী হঠাৎ দেখেন, ধান নিয়ে ছেলে গোপীনাথ হাটে চলেছে। অবাক হয়ে তিনি ছেলেকে ডেকে আনেন। তাঁর প্রশ্ন ছিল, ছেলে যে সব
ধান নিয়ে বাজারে চলেছে, কিন্তু তাঁর ভাগ কোথায়? এই নিয়ে তুমুল
ঝগড়া বেঁধে যায়। এক সময় ছোট বৌমা প্রতিমাদেবীও সেই ঝগড়ায় যোগ দেন। একটা সময় মুখের সঙ্গে যোগ হয় হাত। পড়শিদের অভিযোগ, বৌমা ঝাঁপিয়ে পড়েন শাশুড়ির উপর এবং তাঁকে চিত করে ফেলে কামড়ে ছিঁড়ে নেন নাক।

সুমিত্রার আর্তনাদে পড়শিরা তখন ছুটে আসে। বেগতিক বুঝে চম্পট দেন গোপীনাথ ও প্রতিমা। পড়শিরা এর পর রক্তাক্ত সুমিত্রাদেবীকে বালুরঘাট হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতাল সূত্রের বক্তব্য, নাকের টুকরোটি মেলেনি। এই অবস্থায় চিকিৎসা করা বালুরঘাট হাসপাতালের পক্ষে সম্ভব নয়। নাকে যদি প্লাস্টিক সার্জারি করাতে হয়, তা হলে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ বা কলকাতার কোনও হাসপাতালে যাওয়া উচিত। সেই মতো সুমিত্রাদেবীকে ‘রেফার’-ও করে দেওয়া হয়েছে।

পড়শিরা বলছেন, ফসলের ভাগ নিয়ে মায়ের সঙ্গে ছোট ছেলের ঝগড়া ছিল নিত্যকার ঘটনা। তাঁদের আরও অভিযোগ, ঝগড়ার শেষে কোনও কোনও দিন সুমিত্রাদেবীকে মারধরও করা হতো। তবে এর শেষ যে নাক দিয়ে মেটাতে হবে সুমিত্রাকে, তা কেউ ভাবতে পারেননি। রবিবারের ওই চুলোচুলির ঘটনা অবশ্য মেনে নিয়েছেন বৌমা প্রতিমাদেবী। কিন্তু অস্বীকার করেছেন নাক কামড়ে নেওয়ার কথা। তাঁর দাবি, ‘‘আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। কী হয়েছে মনে নেই।’’ গোপীনাথের দাবি, ‘‘গোলমালের সময় মা পড়ে গিয়ে নাকে আঘাত পেয়েছেন।’’

বড় ছেলে গৌর এ সব কিছুর থেকে দূরে থাকতে চান। কিছুটা এড়িয়ে যাওয়ার ঢঙে তিনি বলেন, ‘‘ঘটনার সময় তো ছিলাম না। পরে খবর পেয়ে মাকে হাসপাতালে দেখতে যাই।’’

পড়শিরা কিন্তু বলছেন, ধান তো গেলই। এ বার না জেলে যেতে হয় বৌমাকে!

 

সুত্র- আনন্দবাজার।