ভাড়াটে খুনি দিয়ে স্বামীকে হত্যা

 

কুমিল্লার মুরাদনগরে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে স্ত্রীর ভাড়াটে খুনিরা মুরাদনগর উপজেলার আকবপুর নোহাটি গ্রামের ময়নাল হোসেনকে হত্যা করেছে। বৃহস্পতিবার বিকালে ৮ নং আমলী আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহদ বিন আমীন চৌধুরীর আদালতে নিহত প্রবাসীর স্ত্রী তাছলিমা বেগম চাঞ্চল্যকর এ জবানবন্দি প্রদান করেন।

গত বছরের ১ নভেম্বর গভীর রাতে মুরাদনগর উপজেলার জাড্ডা হাহাতি গ্রামের শ্বশুরবাড়ি থেকে প্রবাসী ময়নাল হোসেনকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। গত ৮ মার্চ প্রবাসীর স্ত্রী এবং পরদিন তার প্রেমিক শরীফুল ইসলামকে গ্রেফতারের পরই বেরিয়ে আসে ওই হত্যাকাণ্ডের রহস্য।

ডিবি পুলিশ ও আদালতে দেয়া জবানবন্দি সূত্রে জানা যায়, মুরাদনগর উপজেলার আকবপুর নোহাটি গ্রামের মৃত: আব্দুল কাদিরের সৌদি প্রবাসী ছেলে ময়নাল হোসেনের সাথে ১০ বছর আগে একই উপজেলার জাড্ডা হাহাতি গ্রামের ফুল মিয়ার মেয়ে তাছলিমা বেগমের বিয়ে হয়। তাদের ২টি সন্তান রয়েছে। সৌদি যাওয়ার পর সকল অর্থ স্ত্রী তাছলিমার কাছে পাঠায় ময়নাল। এদিকে প্রবাসী স্বামীর অনুপস্থিতিতে তাছলিমা বেগম একই গ্রামের শরীফুল ইসলাম নামের এক যুবকের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। গত বছরের ৩০ অক্টোবর ময়নাল হোসেন দেশে আসার পর শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে অবস্থান করে বিদেশে থেকে পাঠানো অর্থের হিসাব এবং স্ত্রীর পরকীয়ার বিষয় নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। এতে তার স্ত্রী ক্ষিপ্ত হয়ে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে ৬ জন সন্ত্রাসীর সাথে চুক্তি করে। পরিকল্পনা মোতাবেক গত বছরের ১ নভেম্বর রাতে ঘাতকরা প্রবাসী ময়নালকে খুন করে লাশ একটি খালে গুম করে। এ বিষয়ে প্রবাসীর স্ত্রী গত ৭ নভেম্বর মুরাদনগর থানায় স্বামী নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরি করেন।

এতে তিনি উল্লেখ করেছিলেন, ‘তার স্বামী ঢাকার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর বাড়ি ফিরেননি।’ এতে মুরাদনগর থানা পুলিশ জিডির সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করলেও ঘটনার রহস্য বের করতে পারেনি। পরে ওই প্রবাসী মা আমেনা খাতুন কুমিল্লা পুলিশ সুপার বরাবরে আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের এসআই শাহ কামাল আকন্দ অভিযোগের তদন্ত শুরু করেন। অভিযোগের সূত্র ধরে ডিবি পুলিশ এরই মধ্যে প্রবাসী ময়নালের স্ত্রীর নিকটাত্মীয় জাকির ও জুয়েলকে গ্রেফতার করে। সর্বশেষ গত ৮ মার্চ কুমিল্লা নগরী থেকে ডিবির একটি টিম তাছলিমাকে গ্রেফতার করার পর তার স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে আসে হত্যার লোমহর্ষক কাহিনী। পরদিন গ্রেফতার করা হয় তাছলিমার প্রেমিক শরিফুল ইসলামকে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির এসআই শাহ কামাল আকন্দ জানান, বিদেশ থেকে পাঠানো স্বামীর অর্থ দিয়ে স্ত্রীর নামে কেনা সম্পত্তি এবং স্ত্রীর পরকীয়ার বিষয়ে সন্দেহ থেকেই দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। এর জের ধরে ওই প্রবাসীকে হত্যা করা হয়। এদিকে ডিবি পুলিশ আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ঘটনার সাথে জড়িত ঘাতকদের আটক এবং নিহতের লাশ উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।