বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনে দেড় মাস সময় লাগবে

 

তরুণদের প্রাধান্য, স্থায়ী কমিটি ও মহাসচিব ঘোষণা শিগগির পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনে কমপক্ষে আরো দেড় মাস সময় নেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কমিটির আকার বড় করার কারণেই এই সময় নিচ্ছেন তিনি; যাতে ‘ত্যাগী ও পরীক্ষিত’ কেউ বাদ না পড়েন। খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতা এ তথ্য দিয়েছেন। জানা গেছে, বিএনপি প্রধান ত্যাগীদের যেমনি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দেবেন, তেমনি ফেলে দেবেন না দলের হয়ে কাজ করতে আগ্রহী ‘সংস্কারপন্থী’ কিংবা আন্দোলনে ‘নিষ্ক্রিয়’ থাকা নেতাদেরও। এ ক্ষেত্রে প্রাপ্ত পদই মূল্যায়নের নির্ণায়ক হবে। দলের নীতিনির্ধারণী এক নেতা নয়া দিগন্তকে বলেন, সবাইকে নিয়েই পথ চলতে হবে। তবে বিতর্কিতদের পুরস্কারের বদলে ‘লেজ কেটে দেয়া’ নীতি অবলম্বন করা হবে। যাতে করে দলের ক্ষোভের সৃষ্টি না হয়। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে বিলম্ব হলেও দলের স্থায়ী কমিটি ও মহাসচিবের নাম শিগগিরই ঘোষণা করা হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে ঘোষণা চলতি সপ্তাহেও আসতে পারে। স্থায়ী কমিটিতে পাঁচটি নতুন মুখ যোগ হচ্ছে, এটা প্রায় নিশ্চিত। চূড়ান্ত তালিকাও প্রস্তুত করে ফেলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। জানা গেছে, বিতর্ক আছে এমন কেউই নতুন করে স্থায়ী কমিটিতে জায়গা পাচ্ছেন না। একটি-দুইটি নামের ক্ষেত্রে থাকতে পারে চমক। আর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুলই হতে যাচ্ছেন পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব। বিএনপির জাতীয় সম্মেলনের পর ইতোমধ্যে কেটে গেছে ১০ দিন। নেতাকর্মীরা এখন নতুন কমিটি ঘোষণার প্রতীক্ষায় রয়েছেন। পদপ্রত্যাশীদেরও ঘুম হারাম। যে যেভাবে পারছেন লবিং-তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শুরু হয়েছে প্রতিযোগিতা। ফেসবুক, টুইটার, ভাইবারের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে নেতাদের সাথে যোগাযোগ চলছে। রাজপথের আন্দোলনে ভূমিকার প্রমাণ পাওয়া যায় এমন ছবি পোস্ট করা হচ্ছে, কেউবা দিচ্ছেন নিজ নিজ মামলার পরিসংখ্যান। তবে আবার অনেকে নেতিবাচক প্রচারণায়ও অংশ নিচ্ছেন। ‘বিষোদগার’ করা হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে। কমিটি কেমন হওয়া উচিত, সে বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কমিটি ঘোষণায় বিলম্ব নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন কেউ কেউ। জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়া এককভাবে খোঁজখবর নিয়ে কমিটি গঠনের কাজ শুরু করেছেন। তদবিরের সুযোগ দিচ্ছেন না তিনি। কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে নির্বাহী কমিটিতে বেশ কিছু নতুন পদ ও বিষয়ভিত্তিক উপকমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ায় কমিটির কলেবর যেমনি বাড়ছে, তেমনি পদপ্রত্যাশীদের আশাও বেড়েছে। নতুন নতুন এসব পদে এবার প্রাধান্য থাকছে অপেক্ষাকৃত তরুণদেরই। বিশেষ করে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টাদের বাইরে নির্বাহী কমিটির অন্যান্য পদে তরুণদের জায়গা দেয়ার পক্ষপাতী। খালেদা জিয়াও এ ক্ষেত্রে একমত পোষণ করেছেন। অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতাদের একটি তালিকা দলের হাইকমান্ডের কাছে আগে থেকেই রয়েছে, যারা বিগত আন্দোলনে ‘নির্দেশনা’ অনুযায়ী ভূমিকা রেখেছেন। অন্যদের মধ্যে সাবেক ছাত্রদল নেতারাও আছেন এ তালিকায়। নানা সময়ে সংযোজনের ফলে বর্তমানে বিএনপির নির্বাহী কমিটিতে আছেন ৪০৭ জন। ষষ্ঠ কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীÑ এবার কর্মকর্তা পর্যায়ে আরো ৫৬টি পদ বাড়ানো হয়েছে। এর বাইরে চেয়ারপারসন আরো ১০ শতাংশ সদস্য বাড়াতে পারবেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদমর্যাদার উপদেষ্টা নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো সংখ্যা বেঁধে দেয়া হয়নি। এটাও নির্ভর করছে চেয়ারপারসনের ওপর। পাশাপাশি এবার বিষয়ভিত্তিক ২৫টি উপকমিটি হচ্ছে। প্রতিটি উপকমিটিতে থাকবেন ১২ জন। সব মিলিয়ে বিশাল কমিটিই করতে যাচ্ছে বিএনপি। গঠনতান্ত্রিক সংশোধনী অনুযায়ী ভাইস চেয়ারম্যান পদ ১৭ থেকে বাড়িয়ে ৩৫টি করা হয়েছে। সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ হবে প্রশাসনিক বিভাগ অনুযায়ী। সে হিসাবে এখন সাংগঠনিক সম্পাদক হবেন আটজন। সহসাংগঠনিক সম্পাদক একজন করে বাড়িয়ে বিভাগওয়ারী দুইজন করা হয়েছে। ুদ্র ঋণবিষয়ক এবং শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক ও সহসম্পাদক পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিকবিষয়ক সাতটি সহসম্পাদক পদ, ধর্মবিষয়ক সহসম্পাদক একজন বাড়িয়ে চারজন এবং দু’টি করে প্রশিণ, পরিবার কল্যাণ ও স্বাস্থ্যবিষয়ক সহসম্পাদক পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। একটি করে সহসম্পাদকের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে অর্থনীতি, জলবায়ু, প্রশিণ, গণশিা, বন ও পরিবেশ, স্বনির্ভর, তাঁতিবিষয়ক, তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক, প্রবাসীকল্যাণ, বিজ্ঞান প্রযুক্তি, শিল্প ও বাণিজ্য, মানবাধিকার, উপজাতিবিষয়ক পদে। ২৫টি বিষয়ভিত্তিক উপকমিটি হচ্ছেÑ অর্থ ও পরিকল্পনা, জনস্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, প্রতিরা, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি, আইনশৃঙ্খলা ও বিচারব্যবস্থা, শিা ও প্রশিণ, গবেষণা, শিল্প ও বাণিজ্য, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন, নারী ও শিশু উন্নয়ন, যুব উন্নয়ন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন, শ্রম ও প্রবাসীকল্যাণ, যোগাযোগ ও গণপরিবহন, এনার্জি ও খনিজসম্পদ, মানবাধিকার, বন্যানিয়ন্ত্রণ, মুক্তিযুদ্ধ, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ুদ্রঋণ, সুশাসন ও জনপ্রশাসন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, জাতীয় সংহতি ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নয়া দিগন্তকে বলেন, কাউন্সিলে দলের চেয়ারপারসনকে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি সময়মতো কমিটি ঘোষণা করবেন। যাকে যোগ্য মনে করবেন, তাকেই তিনি কমিটিতে স্থান দেবেন। এ ক্ষেত্রে লবিং-তদবির কোনো মুখ্য বিষয় নয়।