প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃত্ব নিয়ে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সম্পৃক্ততা ও হস্তক্ষেপ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবেনা তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে এর কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কোন ধরনের বাধা না দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। উদ্যোক্তা হিসেবে মহিউদ্দিন কেন ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করতে পারবেন না তা-ও জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট।
উচ্চ আদালতের এ অবস্থানের ফলে সাবেক মেয়র ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী আবারও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃত্বে ফিরলেন। বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে মহিউদ্দিনকে প্রিমিয়ারে কোণঠাসা করার চেষ্টা চলছিল। কিন্তু আদালতের দ্বারস্থ হয়ে মহিউদ্দিন কার্যত প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর চসিকের কর্তৃত্বকেই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিলেন।
সূত্র জানায়, ৯ ডিসেম্বর (বুধবার) সাবেক মেয়র ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিট পিটিশন (১২৮৯২/২০১৫) দায়ের করেন। বিচারপতি জনাবা নাইমা হায়দার ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের যৌথ ডিভিশন বেঞ্চে এর প্রাথমিক শুনানি হয়।
রিটের শুনানিতে মহিউদ্দিনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট প্রবীর নিয়োগী প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পটভূমি এবং এতে মহিউদ্দিনের উদ্যোক্তা হওয়া, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন এবং ইউজিসি’র সাম্প্রতিক ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। শুনানি শেষে আদালত রুলনিশি জারি করেন।
মহিউদ্দিনের আইনজীবী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ২০০২ সালে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর উদ্যোক্তা ছিলেন তৎকালীন মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। বিশ্ববিদ্যালয়টি বেসরকারি হওয়ায় চসিক এর পরিচালনা করতে পারেনা। কারণ চসিক একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চালানোর এখতিয়ার সরকারি প্রতিষ্ঠানের নেই। আইন অনুসারে চসিকের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর মালিকানা কিংবা নিয়ন্ত্রণ দাবি এবং হস্তক্ষেপের কোন বৈধ অধিকার নেই।
তিনি বলেন, চসিকের সঙ্গে প্রিমিয়ারের সম্পর্ক হচ্ছে প্রিন্সিপাল টু প্রিন্সিপাল। চসিকের জমি ভাড়ার বিনিময়ে প্রিমিয়ার ব্যবহার করছে। প্রিমিয়ার তাদের বিদ্যুৎ বিল, বাড়ি ভাড়া দিচ্ছে। কিন্তু প্রিমিয়ার পরিচালনায় চসিক কোন হস্তক্ষেপ করতে পারবেনা। আইন অনুযায়ী প্রিমিয়ার হচ্ছে একটা স্বাধীন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
মহিবুল বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে উদ্যোক্তা হিসেবে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীই ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করতেন। এতদিন ইউজিসি প্রিমিয়ারের কোন বিষয়ে উপাচার্য কিংবা রেজিস্ট্রারকে চিঠি দিত। কিন্তু এবার ইউজিসি মেয়রকে চিঠি দিয়েছে। তারা ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের জন্যও মেয়রকে বলেছে। এটা ইউজিসি কোন এখতিয়ারবলে করেছে সেটা আমরা রিট পিটিশনের শুনানিতে প্রশ্ন তুলেছি। কারণ আইন অনুযায়ী মেয়রের এতে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ নেই।
‘প্রিমিয়ার প্রতিষ্ঠার সঙ্গে আরও ছিলেন ড.জামাল নজরুল ইসলাম, ড.আবু ইউসুফ আলম, ড.অনুপম সেন, ড.আব্দুল মান্নান, আনোয়ারুল আজিম আরিফ, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অবদান আছে। এতে তো চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কোন অবদান নেই। সুতরাং আমরা বলেছি, উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে কোনভাবেই বাদ দেয়া যাবেনা। ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের ক্ষমতাও থাকতে হবে তার হাতে। ’ বলেন মহিবুল।
রিটের শুনানি শেষে হাইকোর্ট কেন মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চিঠি অবৈধ ঘোষনা করা হবেনা এবং উদ্যোক্তা হিসেবে কেনো এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী কর্তৃক ট্রাস্ট বোর্ড গঠন, পরিচালনা পরিষদের উদ্যোক্তা হিসেবে তার সক্রিয় অংশগ্রহন নিশ্চিত করা হবেনা মর্মে রুল জারি করে। রুলের জবাব দিতে হাইকোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, সিটি কর্পোরেশন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়কে আদেশ দিয়েছে।
এছাড়া রুলের পূর্ণাঙ্গ শুনানি না হওয়া পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশনকে দেয়া ইউজিসি’র চিঠির কার্যক্রম স্থগিত করেছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে উদ্যোক্তা হিসেবে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অংশগ্রহনে কোন ধরনের বাধা না দিতে চসিককে বলেছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে মহিউদ্দিনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনারও নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। সুত্র- প্রয়োজন২৪.কম