গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপ শুরু হচ্ছে ১৬ আগস্ট। দুই দিনের এই আয়োজনের প্রথম দিন প্রিন্ট মিডিয়া ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবে ইসি। আগামী ১৭ আগস্ট অনলাইন, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও রেডিওর প্রতিনিধিদের সঙ্গে এই মতবিনিময় সভা হবে।
কয়েকটি গণমাধ্যম সুত্রে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন ভবনের সম্মেলন কক্ষে প্রতিদিন সকাল ১০টায় গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুরু হবে সংলাপ। প্রিন্ট মিডিয়া ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মিলিয়ে ৩৭ জন বুধবারের জন্য আমন্ত্রিত। বৃহস্পতিবারের মতবিনিময়ে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও এজেন্সির প্রধান সম্পাদক এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, রেডিওর বার্তা প্রধানসহ ৩৪ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
বুধবার গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের মধ্যে আমন্ত্রিত বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদকরা হলেন— সমকালের গোলাম সারওয়ার, প্রথম আলোর মতিউর রহমান, ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম, মানবজমিনের মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউজ টুডে’র রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, আমাদের অর্থনীতির নাঈমুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ প্রতিদিনের নঈম নিজাম, নিউ এজ-এর নূরুল কবীর, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের মোয়াজ্জেম হোসেন, কালের কণ্ঠ’র ইমদাদুল হক মিলন, ভোরের কাগজের শ্যামল দত্ত, দিনকালের রিজওয়ান সিদ্দিকী। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকদের মধ্যে আমন্ত্রণ পেয়েছেন যুগান্তরের সাইফুল আলম, আমাদের সময়ের মোহাম্মদ গোলাম সারওয়ার, সংবাদের খন্দকার মুনীরুজ্জামান, মানবকণ্ঠের আনিস আলমগীর, সকালের খবরের কমলেশ রায়।
আমন্ত্রিত তালিকায় আরও আছেন সাপ্তাহিক সম্পাদক গোলাম মর্তুজা, জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, বিএফইউজের একাংশের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, মহাসচিব ওমর ফারুক, বিএফইউজের আরেক অংশের মহাসচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীর, আবেদ খান, মাহফুজউল্লাহ, আফসান চৌধুরী, পীর হাবিবুর রহমান, কাজী সিরাজ, আনিসুল হক, কলাম লেখক বিভুরঞ্জন সরকার, মাহবুব কামাল, সৈয়দ বদরুল আহসান, সোহরাব হাসান, প্রধান তথ্য কর্মকর্তা কামরুন নাহার, ইত্তেফাকের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আশীষ সৈকত।
তবে জাতীয় পর্যায়ে বেশকিছু অনলাইন মিডিয়া থাকলেও মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে সংলাপে আহ্বান জানানো হয়েছে। তারা হলেন বাংলানিউজের এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন এবং বিডিনিউজের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী। এ প্রসঙ্গে ইসির জনসংযোগ পরিচালক বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন কেবল প্রতিষ্ঠান ধরে সংলাপ করছে না। প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যক্তিত্বকেও বিবেচনা করা হচ্ছে। এ কারণে কেবল অনলাইন নয়, অনেক প্রিন্ট মিডিয়াও বাদ পড়েছে। আবার এখন কোনও প্রতিষ্ঠানে নেই এমন সিনিয়র সাংবাদিকরাও আমন্ত্রণ পেয়েছেন।’
টিভি চ্যানেলগুলো থেকে বৃহস্পতিবারের সংলাপে বসার আমন্ত্রণ পেয়েছেন— বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক এস এম হারুন-অর রশিদ, চ্যানেল আইয়ের পরিচালক শাইখ সিরাজ, এনটিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক খায়রুল আনোয়ার মুকুল, বাংলাভিশনের হেড অব নিউজ মোস্তফা ফিরোজ, সময় টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ জুবায়ের, গাজী টিভির হেড অব নিউজ মেজবাহ আহমেদ, এটিএন বাংলার হেড অব নিউজ জ. ই. মামুন, এটিএন নিউজের হেড অব নিউজ মুন্নী সাহা, একুশে টিভির হেড অব নিউজ রাশেদ চৌধুরী, একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু, মাছরাঙা টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক রেজোয়ানুল হক রাজা, নিউজ টোয়েন্টিফোরের হাসনাইন খুরশিদ, ইন্ডিপেনডেন্ট টিভির নির্বাহী সম্পাদক খালেদ মহিউদ্দীন, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে ইনপুট এডিটর তালাত মামুন, দেশ টিভির হেড অব নিউজ সুকান্ত গুপ্ত অলোক, ডিবিসির মনজুরুল ইসলাম, বৈশাখী টিভির অশোক চৌধুরী, যমুনা টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক ফাহিম আহমেদ, আরটিভির সিইও সৈয়দ আশিক রহমান, চ্যানেল নাইনের হেড অব নিউজ আমিনুর রশীদ। এছাড়া মাই টিভি, এশিয়ান টিভি, দীপ্ত টিভি, এসএ টিভি, মোহনা টিভির প্রতিনিধিকে মতবিনিময় সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
রেডিও এবং অন্যান্য সাংবাদিকদের মধ্যে এদিন সংলাপে বসার জন্য আমন্ত্রিত বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ, ভয়েস অব আমেরিকার বাংলাদেশ প্রতিনিধি আমির খসরু, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, সাধারণ সম্পাদক মোরসালিন নোমানী এবং দুটি রেডিওর প্রতিনিধি।
বৈঠকের কার্যপত্রে দেখা যায়, কর্মপরিকল্পনার সাতটি বিষয় ছাড়াও প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ে মতামত শুনতে চায় ইসি। ইতোমধ্যে আমন্ত্রণপত্রের সঙ্গে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ম্যানুয়েল, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ও সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত আইনের কপি পাঠানো হয়েছে।
বৈঠকে আলোচন্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে— বিদ্যমান ইংরেজি আইন কাঠামো। বিশেষ করে দ্য রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপল অর্ডার, ১৯৭২ এবং দ্য ডিলিমিটেশন অব কনস্টিটিউয়েন্সিস অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৬’ যুগোপযোগী করে বাংলা ভাষায় প্রণয়ন, বিগত নির্বাচনসমূহের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অবৈধ অর্থ এবং পেশীশক্তির ব্যবহার রোধ কল্পে আইনি কাঠামো সংস্কার সংক্রান্ত প্রস্তাবনা, সংসদীয় এলাকার সীমানা নির্ধারণ কল্পে জনসংখ্যার পাশাপাশি ভোটার সংখ্যা, সংসদীয় এলাকার আয়তন, প্রশাসনিক অখণ্ডতা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিয়ে ডিজিটাল টেকনোলজি ব্যবহারের মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণ, নির্বাচন প্রক্রিয়া যুগোপযোগী ও সহজীকরণের বিষয়ে আইনি কাঠামো ও প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন, প্রবাসী ভোটারদের ভোটদান নিশ্চিত করার বিষয়ে একটি আইন কাঠামোসহ প্রক্রিয়া প্রণয়নের জন্য প্রস্তাবনা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলছে নির্বাচন কমিশনের ধারাবাহিক সংলাপ। এর দ্বিতীয় ধাপ হতে যাচ্ছে গণমাধ্যমের সঙ্গে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু হবে আগামী ২৪ আগস্ট। নিবন্ধিত দলগুলোর শেষ ক্রমিক নম্বর থেকে শুরু হবে এই মতবিনিময়। আগামী ২৪ আগস্ট সকালে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ (নিবন্ধন নম্বর ৪২) ও একইদিন বিকালে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের (নিবন্ধন ৪১) সঙ্গে ইসির সংলাপ হবে।
এরপর ২৮ আগস্ট সকালে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল (নিবন্ধন ৪০) ও বিকালে খেলাফত মজলিশ (নিবন্ধন ৩৮) এবং ৩০ আগস্ট সকালে বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি (নিবন্ধন ৩৭) ও বিকালে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি- জাগপাকে (নিবন্ধন ৩৬) নিয়ে সংলাপে বসবে নির্বাচন কমিশন। ঈদের পর রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আবারও সংলাপ শুরু হবে। প্রথম দফায় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ করেছে কমিশন।